দেশের অর্থনীতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব।

অর্থনীতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের প্রভাব‌ই রয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এক দিকে যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে তেমনি উন্নতিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। যেসব দেশে ভৌগলিক আয়তন ও প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা কম সে সব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। পক্ষান্তরে, যেসব দেশের ভৌগলিক আয়তন ও প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি সে সব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।


দেশের অর্থনীতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব।


জনসংখ্যা বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব গুলো নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো:-

১) শ্রমের যোগান:- অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শ্রম শক্তি অপরিহার্য। আর জনসংখ্যাই হল এই শ্রম শক্তির উৎস। কোন কিছু উৎপাদন করতে হলে ভূমি, মূলধন ও সংগঠনের সাথে শ্রম শক্তির প্রয়োগ অপরিহার্য। দেশের প্রাকৃতি প্রদত্ত সম্পর্কে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করতে হলে শ্রম শক্তি প্রয়োজন। তাই জনসংখ্যা শ্রম শক্তির যোগান দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে।

২) বাজারের বিস্তৃতি:- জনসংখ্যা দেশে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর বাজারের বিস্তৃতি ঘটায়। জনসংখ্যা উৎপন্ন পণ্য সামগ্রী চাহিদা সৃষ্টি করে। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে উৎপন্ন পণ্যসামগ্রির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন তুরান্বিত হয়।

৩) মূলধনের বিকল্প:- উন্নয়নশীল দেশে পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব রয়েছে। অথচ এসব দেশে যথেষ্ট শ্রম সম্পদ রয়েছে। যেসব দেশে মূলধনের ঘাটতি রয়েছে সেসব দেশ মূলধনের বিকল্প হিসেবে শ্রম শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করতে পারে।


Read More :- সরকারি ঋণ এবং সরকারি ঋণের উদ্দেশ্য কি?


৪) জনশক্তি রপ্তানি:- জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মন্ত্র উপার্জনের সুযোগ রয়েছে। যেসব দেশে যথেষ্ট প্রাকৃতিক সম্পদ নেই অথচ প্রচুর জনসম্পদ রয়েছে তারা এসব জনশক্তি বিদেশে রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি তুরান্বিত হয়।

৫) কল-কারখানায় শ্রম বিভাগ প্রবর্তন:- জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে শ্রমের যোগান বৃদ্ধি পেলে কলকারখানায় শ্রম বিভাগ প্রবর্তন ও বৃহদায়য়তন উৎপাদন সম্ভব হয়। এর ফলে শিল্পের বিকাশ ঘটে।


জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি দেশের জন্য তখনই মঙ্গলময় হয় যখন সেই জনসংখ্যা শিক্ষিত হয়। একটি দেশের জনগণ শিক্ষিত হলে দেশের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে এবং দেশে তথ্য প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন খাতে নতুন নতুন আবিষ্কার হয় যেটি একটি দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের জনসংখ্যা শিক্ষিত হলে এবং শিক্ষা ব্যবস্থা ভালো হলে তখন সেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন খুবই দ্রুত হয়। এই কারণে একটি দেশে সমাজ যদি শিক্ষিত হয় তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সেটি দেশের জন্য মঙ্গলকর হয়। এবং শিক্ষিত সমাজ দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং এটিই বলা যায় যদি একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজ ব্যবস্থা উন্নত এবং আধুনিক সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে তাহলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সেই দেশের জন্য মঙ্গলময় হবে। সুতরাং প্রত্যেকটি দেশের সরকারের চেষ্টা করা উচিত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মজবুত করার জন্য এবং সমাজ ব্যবস্থা আধুনিক করার জন্য এর ফলে দেশের অর্থনীতি বিকাশ লাভ করবে এবং একটি স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ ধীরে ধীরে উন্নত দেশে পরিণত হবে।

Read More :- বৈদেশিক সাহায্য এবং এর অসুবিধা গুলো কি কি?


একটি দেশের জনসংখ্যা শিক্ষিত হলে সেই দেশে বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির আবিষ্কার ঘটে যেমন চিনে ৩০ বছর আগেও বিশ্ব অর্থনীতিতে এই দেশটির তেমন কোন প্রভাব ছিল না কিন্তু সরকারের সফল নীতির কারণে দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে এবং উন্নত প্রযুক্তির দিক দিয়ে চীন অনেকে এগিয়ে গিয়েছে এবং একটি শিক্ষিত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যার ফলে চীনের বিপুলভাবে অর্থনীতি উন্নয়ন হয়েছে। আজ চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং জনগণের মাথাপিছু আয় অনেক গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯০ এর দশকে চীনের মাথাপিছু আয় সেখানে  ১ হাজার ডলারের সমান ছিল সেটি আজ প্রায় ১২ হাজার ডলার এবং চীনের জনসংখ্যা ও ১৪০ কোটির বেশি সুতরাং এই বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে এত কম সময়ের মধ্যে এই বিশাল অর্থনৈতিক উন্নয়ন লাভ করা যেটি বিশ্বের সকল অর্থনীতিবিদদের অবাক করেছে। সুতরাং চীনের উদাহরণের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যদি একটি দেশে শিক্ষাব্যবস্থা এবং সমাজব্যবস্থার দিকে সরকারের গুরুত্ব অনেক বেশি থাকে এবং এগুলোকে উন্নত করা যায় তাহলে একটি দেশ অনেক বড় লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়।

বেশি জনসংখ্যা অর্থাৎ বেশি শ্রম শক্তি এবং একটি দেশে শ্রমশক্তির পরিমাণ বেশি হলে অর্থনীতিতে তারা প্রচুর অবদান যোগ করে থাকে। সুতরাং একটি দেশের জনসংখ্যা বেশি হলে অর্থনীতির গতিধারা বৃদ্ধি পায় এবং এ বিশাল জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে একটি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশকে ধীরে ধীরে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আর এই শ্রম শক্তিকে বিদেশে পাঠিয়ে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব। তবে অবশ্যই এটি লক্ষ্য রাখতে হবে যে, শ্রমশক্তি যেন শিক্ষিত এবং বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে কারণ এই ডিজিটাল যুগে যেভাবে টেকনোলজির অগ্রগতি হচ্ছে সেই তুলনায় একটি দেশের জনগণ পিছিয়ে থাকলে সেটি দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলকর নয়। সুতরাং অধিক জনসংখ্যাকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এর মাধ্যমে কর্মক্ষম জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে তাহলেই জনসংখ্যা দেশের অর্থনীতিতে প্রচুর অবদান রাখবে। আর দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধি পেলে পৃথিবীর বুকে সেই দেশ ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সেই দেশের নাম-ডাক থাকে সুতরাং একজন দেশবাসী হিসেবে এটি একটি গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। এভাবেই দেশের অধিক জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে জনসংখ্যাকে জন শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং তাদেরকে শিক্ষিত করে একটি দেশকে এবং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব।

Post a Comment

0 Comments