অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো বিভিন্ন কারণে বিদেশি সাহায্য নিয়ে থাকে। কারণ, এই ধরনের দেশগুলোর মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এবং মাথাপিছু আয় অত্যন্ত কম হয় সেজন্য দেশের নিজস্ব অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রজেক্টে ব্যয় করা সম্ভব হয় না। এর ফলে দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশি ঋণের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। তবে বিদেশি ঋণের উপর বেশি নির্ভরশীল হলে এর অনেক সমস্যা রয়েছে। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় বিদেশী ঋণের মাধ্যমে সুবিধার থেকে অসুবিধা বেশি সৃষ্টি হয়।
নিচে বিদেশি দিনের অসুবিধা গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:-
১) বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য মূলত শর্ত সাপেক্ষে প্রদান করা হয়। বৈদেশিক সাহায্য প্রদানের সময় সাহায্যদাতা দেশসমূহ নানা ধরনের শর্ত আরোপ করে থাকে। এসব শর্ত সব সময় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য শুভ নাও হতে পারে। তাছাড়া, সাহায্য প্রদানকারী দেশসমূহ শর্ত যুক্ত বৈদেশিক সাহায্যের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণকারী দেশের অভ্যন্তরীণে ও বৈদেশিক নীতিতে হস্তক্ষেপ করে।
২) বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের জন্য উচ্চ হারে সুদ প্রদান করতে হয়। বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিষদ ঋণ গ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য একটি বিরাট বোঝাস্বরূপ। বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ফলে অনেক সময় দেশের ভবিষ্যৎ বংশধরদেরও এ ধরনের বোঝা বহন করতে হয়।
Read More :- বৈদেশিক সাহায্য এবং এর সুবিধা গুলো কি কি?
৩) বৈদেশিক সাহায্য সব সময় ঋণ গ্রহণকারী দেশের বিনিয়োগ নির্ণায়ক সমূহ পূরণ করেনা। অনেক ক্ষেত্রে ই ঋণ গ্রহণকারী দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা ঋণ প্রধান কারি দেশসমূহের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রণয়ন করতে হয়। ফলে যেসব প্রকল্পে সাহায্য দেওয়া হয় তা অনেক সময় সাহায্য গ্রহণকারী দেশের জন্য কার্যকরী ও উৎপাদনক্ষম না ও হতে পারে।
৪) বৈদেশিক মূলধন বিনিয়োগকারিগণ অনেক সময় দেশের ভবিষ্যৎ স্বার্থ চিন্তা না করে কেবল নিজেদের মুনাফার খাতিরে দেশের সম্পদ সমূহ যথাযথভাবে ব্যবহার করে থাকে। এর ফলে দেশের সম্পদের অপব্যবহার হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ দুর্বল হয়ে পড়ে।
৫) বিদেশি উদ্যোক্তাগণ সাধারণত কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে দেশীয় লোকদের নিয়োগ করেনা এবং উন্নত কলাকৌশল ও যান্ত্রিক জ্ঞান লাভের সুযোগ দেয় না। ফলে দেশীয় শ্রমিকগণ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও কারিগরি জ্ঞান লাভ করতে পারে না।
৬) বৈদেশিক সাহায্যের উপর অত্যাধিক নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আনয়ন করে। কি পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। অনেক সময় বিদেশি সরকার কর্তৃক ওয়াদা কৃত সাহায্য সময় মত পাওয়া যায় না। ফলে বৈদেশিক সাহায্য ও অনিশ্চিয়তার সৃষ্টি করে। বৈদেশিক সাহায্যের এ অনিশ্চয়তা ঋণ গ্রহণকারী দেশের পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত করে।
৭) বৈদেশিক সাহায্য একটি দেশকে পরমুখাপেক্ষী করে তোলে। বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করার ফলে এসব দেশ ক্রমাগতভাবে পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফোনে এসব দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে না।
৮) পরিশেষে, বৈদেশিক সাহায্য দেশের আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে। তাছাড়া, বৈদেশিক সাহায্যের উপর অত্যাধিক নির্ভরশীলতা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতিও হুমকিস্বরূপ।
Read More:- কর কাকে বলে এবং প্রত্যক্ষ কর ও পরোক্ষ কর কী?
অবশেষে এটিই বলা যায় যে, বৈদেশিক সাহায্য এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের তুলনামূলক বিচার করলে এটি স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, বৈদেশিক বাণিজ্যের কতগুলো বিশেষ সুবিধা রয়েছে। কোন দেশে পক্ষে পুরোপুরি বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের উপর নির্ভরশীল থাকা উচিত নয়। বিশেষ করে অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর এই বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন কারণ এই সকল দেশে যথেষ্ট অর্থের ঘাটতি রয়েছে এবং এর ফলে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো ঠিক সময়ে করা সম্ভব হয় না এই কারণে অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো বৈদেশিক ঋণের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে কাজেই বৈদেশিক সাহায্যের অশুভ দিক সম্বন্ধে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে।
বৈদেশিক সাহায্যের নামে কোন দেশ যাতে আমাদের উপর কোন প্রকার চাপ সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অবশ্য বর্তমান অবস্থায় অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে পুরোপুরি ভাবে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ হতে বিরত থাকা সম্ভব নয়। অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে অবশ্যই কিছু না কিছু বৈদেশিক সাহায্য নিতে হবে। তবে অদূর ভবিষ্যতে দেশকে বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর অধিকতর নির্ভরশীল হতে হবে এবং অভ্যন্তরিনীয় সম্পদ ও রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে পরিহার করতে হবে। এজন্য যথার্থই বলা হয় যে, "সাহায্য নাই, বাণিজ্য" এটিই অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত।
বৈদেশিক সাহায্য একটি দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর ব্যাপক অসুবিধা রয়েছে। সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এটি কোন দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নেওয়া হলে তারা বিভিন্ন শর্ত প্রদান করে থাকে এবং সাহায্য গ্রহণকারী দেশগুলোকে সেই শর্ত অনুযায়ী এই অর্থ ব্যয় করতে হয় এর ফলে সাহায্য গ্রহণকারী দেশগুলো তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সঠিকভাবে এই অর্থ ব্যয় করতে পারে না যার কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এবং এর দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো দুর্নীতি, অনেক সময় বিদেশ থেকে সাহায্য আসলে সেটি যে প্রকল্পের ব্যয় হওয়ার কথা সেখানে বিভিন্ন দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার জন্য সেই প্রকল্পে সঠিকভাবে অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয় না। যার ফলে অনেক নিম্নমানের কাজের জন্য প্রকল্পটি সঠিকভাবে গড়ে ওঠে না এই কারণে ভবিষ্যতে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় যেটি আমাদের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলকর নয়। বৈদেশিক সাহায্যের অর্থগুলো সঠিকভাবে ব্যয় না করতে পারলে সেটি আমাদের অর্থনীতিতে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বাস কোন গুরুত্ব রাখবে না যার ফলে বৈদেশিক সাহায্য গুলো অর্থনীতির জন্য মঙ্গলকর না হয়ে আমাদের উপর ঋণের বোঝা বাড়াতে পারে। বৈদেশিক সাহায্যের আরো একটি সমস্যা হল, বিভিন্ন দেশ বৈদেশিক সাহায্যের নাম করে প্রচুর অর্থ প্রদান করে থাকে তবে তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো সাহায্য গ্রহণকারী দেশটির উপর নিজের প্রভাব বিস্তার করা যেটি একটি স্বাধীন এবং সর্বভৌম দেশের জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয় হতে পারে। সুতরাং অবশেষে বলা যায় দেশের উন্নতির জন্য বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করলেও সেটি অনেক বুঝে করতে হবে যাতে সাহায্য প্রদানকারী দেশ বা সংস্থা সাহায্য গ্রহণকারী দেশের উপর বিশাল কোন প্রভাব না বিস্তার করতে পারে এবং সাহায্য গ্রহণকারী দেশ যেন সেই অর্থ সঠিক প্রকল্পে ব্যয় করে এবং ভবিষ্যতে সেই অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া সামর্থ্য রাখে।
0 Comments