যে কোন দেশের অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে নিজের দেশের পণ্য সমগ্র পৃথিবী জুড়ে রপ্তানি করা যায়। এর ফলে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায় এবং বিদেশে রপ্তানি কৃত পণ্যগুলো থেকে যে অর্থ আয় হয় সেটির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়। সুতরাং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে নিম নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১) অনুৎপাদিত দ্রব্য আমদানি:- পৃথিবীর কোন দেশ তার প্রয়োজনীয় সব দ্রব্য নিজে উৎপাদন করতে পারে না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রত্যেক দেশটার নিজের দেশে অনুৎপাদিত পূর্ণ সামগ্রী অন্য দেশ থেকে আমদানি করে ভোগ করার সুযোগ পায়।
২) রপ্তানিকৃত পূর্ণস্যামগ্রী:- কোন দেশ যখন তার অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি দ্রব্য উৎপন্ন করে তখন সে দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বেঁচে যাওয়া পণ্য বিদেশি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে।
৩) জরুরি অবস্থার মোকাবেলা:- কোন দেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জ্বলোচ্ছ্বাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে জরুরী ভিত্তিতে এই অবস্থার মোকাবেলা করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদেশ থেকে খাদ্য সামগ্রী, ওষুধপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পূর্ণ সামগ্রী আমদানি করে জরুরি অবস্থার মোকাবেলা করা সম্ভব হয়।
৪) অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি:- স্বল্পোন্নত দেশ সমূহে খাদ্যদ্রব্য, ওষুধপত্র ও অন্যান্য নিত্য ব্যাবহার্য পূর্ণ সামগ্রী বিশেষ করে শিল্প জাত পণ্য সামগ্রীর একান্ত অভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদেশ থেকে এসব দ্রব্য আমদানি করে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্য পণ্যের চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে।
৫) কারিগরি ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান:- বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও প্রকৌশলগত জ্ঞানের অভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদেশ থেকে মূলধন, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি আমদানি করে দেশের শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করা যায়।
Read More :- বৈদেশিক সাহায্য এবং এর সুবিধা গুলো কি কি?
৬) বাজারের বিস্তৃতি:- বাংলাদেশও অধিকাংশ অনুন্নত দেশে জনগণের দারিদ্র্য ও ক্রয় ক্ষমতার স্বল্পতার কারণে পূর্ণ সামগ্রী অভ্যন্তরীণ বাজার সীমিত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে বিদেশে পণ্যের বাজার সৃষ্টি হয়। এর ফলে দেশীয় অন্য সামগ্রীর বাজারের পরিধি বিস্তৃত হয়।
৭) মূলধনের গতিশীলতা বৃদ্ধি:- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে মূলধনের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন দেশের মধ্য মুলতানের আমদানি ও রপ্তানির মাধ্যমে মূলধনের চলাচল বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মূলধনের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
৮) উৎপাদন ব্যয় হ্রাস:- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে আঞ্চলিক শ্রম বিভাগ ও ভৌগোলিক বিশেষীকরণ প্রবর্তন করা সম্ভব হয়। এর ফলে বিভিন্ন দেশের উৎপাদনের পরিমাণ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি উৎপাদন ব্যয় ও পণ্য সামগ্রী দাম কম হয়।
৯) সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার:- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি দেশ যে পণ্য উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা ভোগ করে সে দেশ সেই পণ্যই অধিক পরিমাণে উৎপাদন করে। এর ফলে জাতীয় সম্পদের অপচয় রোধ হয় এবং সর্বাধিক উৎপাদন সম্ভব হয়।
১০) স্বল্পমূল্যে দ্রব্য ক্রয়:- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে বিভিন্ন দেশ আপেক্ষিক সুবিধার কারণে কম খরচে পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন পণ্যের দাম কম হয় এবং ভোক্তারা অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যে দ্রব্য সামগ্রী ভোগ করার সুযোগ পায়।
১১) দক্ষতা বৃদ্ধি:- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে বিভিন্ন দেশের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দরুন বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা বিরাজ করে। বিশেষ করে বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বাণিজ্য উদারীকরণের যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রত্যেকটি দেশ তাদের পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধি চেষ্টা করে। এর ফলে ভোক্তরা অপেক্ষাকৃত কম দামে উন্নতমানের পণ্য সামগ্রী ভোগ করতে পারে।
Read More :- বৈদেশিক সাহায্য এবং এর অসুবিধা গুলো কি কি?
১২) আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি:- আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে। পণ্য সামগ্রী বিনিময় সাথে সাথে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি পায় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই সকল কারণে বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশের মধ্য সুসম্পর্ক গড়ে উঠছে এবং একে অপরের প্রতি আরো বেশি নির্ভরশীল হচ্ছে। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এবং বেকারত্ব দূর হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির আবিষ্কার হচ্ছে সুতরাং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বহু গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থনীতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ একটি দেশে কোন না কোন পণ্যের ঘাটতি থাকে যেটি দেশের সমস্ত জনগণের চাহিদা মেটাতে পারে না সেজন্য আমাদের সেই পণ্যটি অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হয় এবং এর মাধ্যমে দেশে পণ্যটির চাহিদা মেটাতে হয়। এবং একইভাবে একটি দেশে কোন দ্রব্য পণ্যের চাহিদার চেয়ে যোগান যখন অনেক বেশি হয়ে থাকে তখন সেই পণ্যটি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায় সুতরাং এটি থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে যেমন দেশে দ্রব্য পণ্যের ঘাটতি আমরা মেটাতে পারি ঠিক তেমনি দ্রব্য পণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব এর ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল যেমন বৃদ্ধি পায় ঠিক তেমনি দেশের অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেকটি দেশের সরকারের উচিত রপ্তানিকৃত পণ্যের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া কারণ এগুলো রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয় এবং এগুলো দেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে বিনিয়োগ করা যায় এবং এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। তবে অবশ্যই এটি মাথায় রাখতে হবে যে আমদানি এবং রপ্তানির সামঞ্জস্য যেন বজায় থাকে কারণ রপ্তানি চেয়ে আমদানি বেশি করলে তখন প্রচুর পরিমাণ অর্থ অন্য দেশের কাছে চলে যায় যেটি একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলকর নয়। প্রত্যেকটি দেশের উচিত আমদানি এবং রপ্তানির সামঞ্জস্য বজায় রাখা এবং বেশি করে রপ্তানি করার চেষ্টা করা । সুতরাং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রত্যেকটি দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
0 Comments