একটি দেশের অর্থনীতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব।

কোন দেশের জনসংখ্যা যদি সম্পদের তুলনায় অধিকার তাহলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক না হয়ে বরং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। একটি দেশের জনসংখ্যা যদি তুলনামূলক শিক্ষিত না হয় তাহলে দেশটির জন্য জনসংখ্যা অনেক সময় বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ এই উন্নত প্রযুক্তির যুগে পৃথিবীতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই একটি সুশিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থা এবং জনসংখ্যা প্রয়োজন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে কিভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।


একটি দেশের অর্থনীতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব।


১) বেকার সমস্যা সৃষ্টি:- অধিক জনসংখ্যা দেশে বেকার সমস্যা সৃষ্টি করে। জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পায় সে হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হয় দেশে বেকারত্ব দেখা দেয়। ব্যাপক বেকারত্বের ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিঘ্নিত হয়।

২) মাথাপিছু আয়ের স্বল্পতা ও নিম্ন জীবনযাত্রার মান:- জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মাথাপিছু আয় হ্রাস পায় এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জনগণের জীবনযাত্রার মান নিম্ন হয়।

৩) খাদ্য ঘাটতি:- জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। জনসংখ্যা যে হারে বাড়ে খাদ্য উৎপাদন সে হারে বৃদ্ধি না পাওয়ায় দেশে খাদ্য সমস্যা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়।

৪) কৃষির উপর বিরূপ প্রভাব:- জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেশে কৃষি জমির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে কৃষি জমি খন্ড বিখন্ড হয় এবং কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হয়।


Read More :- দেশের অর্থনীতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব।


৫) সঞ্চয় ও বিনিয়োগ হ্রাস:- জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দেশের সঞ্চয় ও বিনিয়োগ হ্রাস পায়। অতিরিক্ত জনসংখ্যা পরিবারের খরচ বৃদ্ধি করে। এর ফলে সঞ্চয় কম হয় আর সঞ্চয় কম হওয়ার দরুন দেশে বিনিয়োগ ও মূলধন গঠন ও কম হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিঘ্নিত হয়।

৬) দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি:- জনসংখ্যা বৃদ্ধি ভোগ্য দ্রব্য ব্যয়বহুল করে তোলে। কারণ, বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা অনুযায়ী মুগ্ধ দ্রব্য উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। এর ফলে দেশে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয় এবং জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পায়।

৭) নির্ভরশীলতার হার বৃদ্ধি:- জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলে দেশে নির্ভরশীলতার আর বৃদ্ধি পায়। কারণ, জনসংখ্যা দ্রুত বাড়লে শিশুর অনুপাত বেশি থাকে। এর ফলে জনসংখ্যা বাড়লেও সমাঅনুপাতিক হারে জনশক্তি বাড়ে না, বরং কোন অনুৎপাদনশীল ও নির্ভরশীল জনসংখ্যার অনুপাত বৃদ্ধি পায়। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়।

৮) সামাজিক অবকাঠামোর ব্যয় বৃদ্ধি:- জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সামাজিক অবকাঠামোর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। দেশে অধিক সংখ্যক স্কুল কলেজ, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল ক্লিনিক প্রভৃতি নির্মাণ করতে হয়। প্রস্তুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সামাজিক অবকাঠামো খাতে ব্যয় বৃত্তি পাওয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিঘ্নিত হয়।

৯) পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব:- জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, বস্ত্র ও খাদ্যের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। এরপরে দেশের সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষিত হয় যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।


Read More :- বৈদেশিক সাহায্য এবং এর অসুবিধা গুলো কি কি?


১০) সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা:- জনসংখ্যার আধিক্য দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। অধিক জনসংখ্যার কারণে দেশে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক ও অস্থিরতা দেখা দেয়। এ ধরনের সমাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কারণে দেশের উন্নয়নের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।

উপসংহারে বলা যায় যে, উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, কোন দেশে অর্থনীতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি যেমন কিছু ইতিবাচক বা অনুকূল প্রভাব বিস্তার করে তেমনি জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব বা অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এজন্য যথার্থই বলা হয় যে, "জনসংখ্যা এক দিকে যেমন সম্পদ তেমনি অন্যদিকে দায়ও বটে" । সুতরাং একটি দেশের জন্য শিক্ষিত জনসংখ্যা অত্যন্ত জরুরি কারণ জনসংখ্যা যদি শিক্ষিত হয় তাহলে দেশের উন্নয়ন হয়ে থাকে কিন্তু জনসংখ্যা যদি শিক্ষিত না হয় তাহলে সেটি দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। প্রত্যেক দেশের সরকারকে এজন্য শিক্ষাব্যবস্থা এবং আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার থেকে জোর দিতে হবে যাতে  দেশের জনসংখ্যাকে শিক্ষিত করা যায় এবং দেশকে ভবিষ্যতে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়। এতে করে দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং বেকারত্ব ও খাদ্য সংকট থেকে দেশকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি যেমন কিছু সুফল বয়ে আনে ঠিক তেমনি এর নেতিবাচক কিছু দিক রয়েছে। বাংলাদেশের মতো আয়তনে ছোট একটি দেশে যদি অধিক জনসংখ্যা বসবাস করে তাহলে প্রকৃতির উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে যেমন প্রাকৃতিক সম্পদ সল্প থাকলেও অত্যাধিক জনসংখ্যার কারণে সেগুলো দ্রুত ফুরিয়ে আসে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় ও পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও অত্যাধিক জনসংখ্যা থাকলে এবং দেশের গণতন্ত্র সঠিক উপায় না চললে অদূর ভবিষ্যতে দেশের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কারণ অত্যাধিক জনসংখ্যা থাকলে প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি বেড়ে যায় এবং দেশটি যদি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ হয় তাহলে নিম্নমানের জীবন যাপনের কারণে দেশের জনগণের মত অস্থিরতা বিরাজ করে সে সময় যদি দেশের গণতন্ত্র সঠিক না থাকে তাহলে দেশটিতে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। একটি দেশে বিপুল জনসংখ্যার জন্য যদি উন্নত মানের শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকে তাহলে দেশটির জনগণ পর্যাপ্ত পরিমাণ শিক্ষা পায় না এবং ভবিষ্যতে এটি দেশের অর্থনীতি এবং সমাজের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সুতরাং বলা যায় একটি দেশের জনসংখ্যা বেশি হলে দেশের শ্রম শক্তি যেমন বৃদ্ধি পায় ঠিক তেমনি প্রাকৃতিক সম্পদ এবং প্রকৃতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে আর সে জনসংখ্যা যদি শিক্ষিত না হয় তাহলে দেশটির জন্য অতিরিক্ত জনসংখ্যা বোঝা স্বরুপ হয়ে দাঁড়ায়।

Post a Comment

0 Comments