কোন দেশের প্রেক্ষিতে আত্মকর্মসংস্থান বা স্ব-সহকর্মসংস্থানের ধারণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আত্ম কর্মসংস্থান বলতে কোন ব্যক্তির কৃষিকাজ, ক্ষুদ্র ব্যবসা বা কুটিরশিল্পে নিয়োজিত হয়ে স্ব-উদ্যোগে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাকে বোঝায়। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো বেকার সমস্যা। বাংলাদেশের বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। ২০১০ সালে লিভার ফোর্স সার্ভিস অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তির পরিমাণ হলো ৫.৪১ কোটি, তন্মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৩.৭৯ কোটি এবং মহিলা সংখ্যা ১.৬২ কোটি। বর্তমানে বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। বরং প্রাতিষ্ঠানিক খাতসমূহ কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও সংকুচিত হচ্ছে। এ অবস্থায় দারিদ্র বিমোচন ও বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্ব-কর্মসংস্থান হল এমন এক ধরনের কর্মসংস্থান যা স্বল্প মূলধন ও সামান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে একজন ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় যা তাকে পরিবর্তনশীলতা ও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়। এ ধরনের স্ব কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সরকার সহ বিভিন্ন ধরনের বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও নানাবিধি কর্ম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে যে খাতির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হল কুটির শিল্প। কারণ কুটির শিল্প হল এমন এক ধরনের শিল্প যেখানে স্বল্প মূলধন, সহজ লক্ষ্য কাঁচামাল ও স্বল্পমূল্যের যন্ত্রপাতি সাহায্যে উৎপাদন কাজ পরিচালিত হয়। এ শিল্প অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের নিজস্ব প্রয়োজন ও শ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় এবং স্বল্প প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে অধিকাংশ কুটির শিল্প ও আত্মকর্মসংস্থান মূলক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পারিবারিক পরিবেশে অস্ত্র চালিত শিল্পে তাঁতের কাপড় তৈরি, বাস ও বেতের দ্রব্য সামগ্রী তৈরি, মাদুর তৈরি, নারিকেলের ছোবড়া জাত দ্রব্য তৈরি, কাগজে ঠোঙ্গা তৈরি, মৌমাছির চাষ, হাঁস মুরগির চাষ, বাচ্চা ছেলে ও মেয়েদের পোশাক তৈরি, উলের কাজ, কাঠের বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী তৈরি, জুতা, চপ্পল-সুটকেস, মানিব্যাগ প্রভৃতি চামড়াজাত দ্রব্য তৈরি, কাসা ও পিতল জাত দ্রব্য তৈরি, মাটির হাড়ি, কলসী, থালা, ফুলের টব, পুতুল তৈরি প্রভৃতি। বিভিন্ন কুটির শিল্প জাত দ্রব্য তৈরি করে একজন কর্মক্ষম যুবক স্বল্প পুঁজির অধিকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং সর্বোপরি গ্রামে দরিদ্র অথচ কর্মক্ষম মহিলারা এবং বেকার যুবকেরা স্বাধীনভাবে কাজ করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। এভাবে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও দারিদ্র দূরীকরণ সম্ভব।
Read More :- শেয়ার কী এবং এর প্রকারভেদ।
নিজ উদ্যোগকে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করলে এবং সেখানে কয়েকজনকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিলে এটি একটি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ছোট ছোট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয় এর ফলে দেশের অর্থনীতির গতিধারা বৃদ্ধি পায় এবং বেকারত্ব দূর করতে সাহায্য করে। তাই আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দেওয়া উচিত যে শুধুমাত্র চাকরির পেছনে না দৌড়ে নিজ উদ্যোগে কোন একটি ব্যবসা চালু করা যেই সম্পর্কে তার জ্ঞান আছে। উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায় যে তরুণ ছেলে মেয়েরা চাকরি পেছনে না দৌড়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করার জন্য আগ্রহ দেখিয়ে থাকে কিন্তু অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যবসার প্রতি কম আকর্ষণ এবং চাকরির জন্য ছেলে মেয়েরা বেশি সময় ব্যয় করে থাকে। একটি দেশের অর্থনীতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে সুতরাং সরকারকে এদিকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মে ছেলেমেয়েরা ব্যবসা মুখী হয় এবং তারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
Read More :- কোন দেশের মুদ্রাস্ফীতি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
উপসংহার বলা যায় যে, আত্মকর্মসংস্থান একটি দেশের অর্থনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং সরকারি সাহায্য এবং বিদেশি সাহায্য অথবা বিভিন্ন এনজিওগুলোর মাধ্যমে কিভাবে দেশের মধ্য বেকার ছেলেমেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করা যায় সেদিকে সরকারকে অনেক গুরুত্ব দিতে হবে। এর ফলে আমাদের দেশের দারিদ্র এবং বেকারত্ব দূর হবে আর আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দেখা চাইছে মহিলারা পুরুষদের তুলনায় কম হারে দেশের অর্থনীতিতে যোগদান করে সুতরাং এই বিষয়টিও সরকারি নজরে রাখতে হবে এবং মহিলারা যাতে কাজের জন্য উৎসাহী হয় সেদিকে সরকারের খেয়াল রাখতে হবে। মহিলাদের কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশে অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
একটি দেশের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। আত্মকর্মসংস্থানের অর্থ নিজে থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। দেশ থেকে বেকারত্ব দূর করতে হলে আত্মকর্মসংস্থানের বিকল্প নেই। নিজ উদ্যোগে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করলে সেখানে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় এবং যার মাধ্যমে দেশে বেকারত্ব দূর হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক গতিধারা বৃদ্ধি পায়। বর্তমান সময়ে দেশে চাকরির পরিমাণ খুবই কম আর এই অবস্থায় অনেক যুবক ঘরে বেকার বসে থাকে যার ফলে তার নিজের জীবনের বিভিন্ন সমস্যা ছাড়াও সেটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি খারাপ প্রভাব সৃষ্টি করে। তাই যারা কোন কারনে চাকরি পাচ্ছে না বা চাকরি করতে চাইছে না তাদের জন্য স্বনির্ভর হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ বেকার না বসে থেকে নিজে কিছু করে দেখানো এবং অর্থনীতিতে নিজস্ব ভ্যালু এড করা এটি নিজের জন্য ও দেশের জন্য অত্যন্ত মঙ্গলকর। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোকে ধীরে ধীরে উন্নত দেশে গড়ে তুলতে হলে আত্মকর্মসংস্থানের বিকল্প নেই। এজন্য স্কুল - কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মকর্মসংস্থান সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা দিতে হবে এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে যাতে কোন কারণে সেই শিক্ষার্থী যদি চাকরি না পায় তাহলে যেন তাকে বেকার না বসে থাকতে হয়। আত্ম কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজে স্বনির্ভর হওয়ার সাথে আরো চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয় যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং একটি দেশের উন্নয়নে আত্মকর্মসংস্থানের বিকল্প নেই।
0 Comments