পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বিশ্বায়নের পক্ষে জোরালো যুক্তি প্রদর্শন করে। কারণ বিশ্বায়নের ফলে উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়েছে ও পৃথিবীর সকল দেশে তাদের প্রভাব ব্যাপক হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বায়নের প্রভাবে উন্নত দেশের উন্নত বিভিন্ন টেকনোলজি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষও ব্যবহার করার সুবিধা পাচ্ছে। বিশ্বায়নের প্রভাবে পুরো পৃথিবী একত্রিত হচ্ছে এবং বিশেষ সকল দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৩০ বছর আগেও পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে এই বিশাল পরিমাণ বাণিজ্যিক লেনদেন হবে সেটা ভাবাও যেত না কিন্তু বিশ্বায়নের প্রভাবে সেটি আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। সুতরাং বিশ্বায়ন পৃথিবীর অর্থনীতির জন্য একটি বিশাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বায়নের পক্ষে যুক্তি গুলো বা বিশ্বায়নের সুবিধা গুলোর নিচে আলোচনা করা হলো।
১) পুণ্য সেবার অবাধ প্রবাহ:- বিশ্বায়নের পক্ষে অন্যতম প্রধান যুক্তি বা সুবিধা হল বিভিন্ন দেশের মধ্যে পণ্য সেবার অবাধ প্রবাহ। বিশ্বায়নের ফলে এক দেশে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী ও সেবা কর্ম অবাধে অন্য দেশে প্রবেশ করতে পারে। এই কারণে বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের ইচ্ছা ও পছন্দমত পণ্য সামগ্রী ভোগ করতে পারে।
২) শ্রমের গতিশীলতা:- বিশ্বায়নের অন্যতম সুবিধা হল বিভিন্ন দেশের মধ্যে শ্রমের অবাধ প্রবাহ। বিশ্বায়ন ব্যবস্থায় এক দেশের শ্রমিক সহজেই অন্য দেশের শ্রমের বাজারে প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে শ্রম উদ্বৃত্ত এবং শ্রম ঘাটতি উভয় দেশই লাভবান হয়।
৩) পুঁজির গতিশীলতা:- বিশ্বায়নের ফলে পুঁজির গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। বিশ্বায়ন ব্যবস্থায় বিভিন্ন দেশের মধ্যে পুঁজির অবাধ প্রবাহ ঘটে। এর ফলে উন্নত দেশের উদ্ধৃত্ত পুঁজি বা মূলধন অনুন্নত দেশে বিনিয়োগ করা সম্ভব। বস্তুত বর্তমানে অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের যে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে তার মূলে রয়েছে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া।
৪) উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার:- বিশ্বায়নের পক্ষে অন্যতম প্রধান চুক্তি হলো উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। বর্তমানে উন্নত দেশ সমূহে প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। বিশ্বায়ন ব্যবস্থায় বিশ্বের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ সহজে উন্নত দেশ থেকে এসব প্রযুক্তি ও কলাকৌশল আমদানি ও ব্যবহার করতে পারে। এর ফলে অনুন্নত দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
৫) বাজারের বিস্তৃতি:- বিশ্বায়নের পক্ষে অন্যতম যুক্তি হলো পণ্যের বাজারের ব্যাপক বিস্তৃতি। বিশ্বায়ন ব্যবস্থায় একটি দেশের উৎপাদিত পণ্য অন্য যেকোনো দেশের সহজেই প্রবেশ করতে পারে। বিশ্বায়নের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বাজার সম্প্রসারিত হয়। এর ফলে উৎপাদনকারী ও ভোক্তা উভয় শ্রেণিই লাভবান হয়।
৬) উৎপাদন বৃদ্ধি:- বিশ্বায়নের পক্ষে অন্যতম যুক্তি বা সুবিধা হল উৎপাদন বৃদ্ধি। বিশ্বায়ন ব্যবস্থায় প্রত্যেক দেশ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন করতে পারে। এর ফলে বিশ্বায়ন ব্যবস্থা দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
Read More :- বিশ্বায়ন কি এবং বিশ্বায়নের কিছু বৈশিষ্ট্য।
৭) পণ্যের মূল্য হ্রাস:- বিশ্বায়নের ফলে পণ্যের মূল্য হ্রাস পাবে। কারণ, বিশ্বের যে কোনো দেশে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী অন্য দেশে প্রবেশের সময় শুল্ক বা অন্য কোন কৃত্রিম বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। তাছাড়া, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার দরুন পরিবহন খরচও কম হয়। এর ফোনে পণ্যের মূল্য হ্রাস পায় এবং ভক্তরা একটি যুক্তিসঙ্গত মূল্যে পণ্য সামগ্রী ক্রয় করতে পারে
৮) একচেটিয়া কারবারের অবসান:- বিশ্বায়নের ফলে দেশে একচেটিয়া কারবারের অবসান ঘটে। বিশ্বায়ন ব্যবস্থায় ইচ্ছা করলে কেউ এককভাবে বাজার দখল রাখতে পারে না, সবারই বাজারে প্রবেশের অধিকার রয়েছে। তাই বিশ্বায় ন ব্যবস্থায় কেউ একচেটিয়া প্রকৃত বিস্তার করে পণ্যের উচ্চমূল্য ধার্য করতে পারে না।
৯) সংস্কৃতির বিকাশ:- বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি বিকাশ ঘটছে। তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে আজকে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রই একে অপরের কাছাকাছি আসছে। পারস্পারিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে প্রত্যেক দেশের সংস্কৃতি বিকাশিত হচ্ছে।
১০) আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি:- বিশ্বায়নের ফলে সমগ্র বিশ্ব একটি বিশ্বায়িত গ্রাম এ পরিনিত হয়েছে। প্রত্যেক রাষ্ট্রে একটি একীভূত পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্য এক ধরনের আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি ও ঘনিষ্ঠতার পরিবেশ গড়ে উঠেছে।
Read More :- বিশ্বায়নের বিপক্ষের কিছু যুক্তি এবং নেতিবাচক দিক।
এসব কারণেই বিশ্বায়নের ব্যাপ্তি ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিশ্বায়ন একটি সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে। তবে বিশ্বায়নের বিপক্ষে অনেক যুক্তি আছে সেগুলো নিয়ে অন্য একটি পোস্টে আলোচনা করা হবে।
বিশ্বায়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি দেশ অন্য দেশের উপর অধিকভাবে নির্ভরশীল হয়েছে যার ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কূটনীতিক সম্পর্ক আরো মজবুত হয়েছে হয়েছে এবং যুদ্ধের আশঙ্কা আগের চেয়ে অনেকটা কমে গিয়েছে। বিশ্বায়নের ফলে যখন একটি দেশ অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল হয় তখন দুই দেশের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং বাণিজ্যিক দিক দিয়ে দুই দেশ ই লাভবান হয়। একটি দেশ কখনো সব দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পন্ন হতে পারে না সুতরাং বিভিন্ন জিনিসের চাহিদা মেটাতে একটি দেশকে অন্য আরেকটি দেশের উপর নির্ভরশীল হতে হয় এবং এর ফলে প্রচুর পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় এর ফলে দেশের চাহিদা যেমন মিটে তেমনি অন্য একটি দেশে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়। এগুলো হলো বিশ্বায়নের সুফল কারণ একটি দেশ কোন নির্দিষ্ট দ্রব্য বা পণ্য বেশি উৎপাদন করলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে সে দেশটি বিদেশে সেগুলো রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে ঠিক তেমনি অন্য একটি দেশে কোন একটি নির্দিষ্ট দ্রব্য বা পণ্য কম উৎপাদিত হলে সেটি অন্য দেশ থেকে আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় এর ফলে সম্পদের সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত হয় এবং দুই দেশের মানুষেরই নিজেদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। সুতরাং বলা যায় বিশ্বায়নের ফলে গ্লোবাল অর্থনীতির গতিধারা বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ফলে প্রচুর পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, প্রত্যেকটি দেশ তাদের দেশের সম্পদের সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত করতে পারছে এবং প্রত্যেকটি দেশের জনগণই বিশ্বায়নের বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করতে পারছে।
0 Comments