যে সমস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রধানত বিদেশে রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করে তাকে রপ্তানিমুখী শিল্প বলা হয়। এসব শিল্পী উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী দেশের অভ্যন্তরেও রোগের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, তবে রক্ত নিব কি শিল্পের মূল লক্ষ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী রপ্তানি করা এবং অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা। যেমন - বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটজাত দ্রব্য, চা, চামড়া, তৈরি পোশাক ইত্যাদি রপ্তানি মুখী শিল্পের শ্রেণি ভুক্ত। এসব শিল্প জাত দ্রব্য উৎপাদনের মূল উদ্দেশ্য হলো বিদেশের বাজারে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি, অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং লেনদেনে ভারসাম্যে প্রতিকূলতা দূর করা। দেশীয় কাঁচামালের সর্বোত্তম ব্যবহার, উৎপাদন ক্ষেত্রে তুলনামূলক ব্যয় সুবিধা ভোগ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সম্ভাবনা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে রপ্তানি মুখে শিল্প গড়ে তোলা হয়।
রপ্তানিমুখী শিল্পের গুরুত্ব নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো:-
১) দেশীয় শিল্পের প্রসার:- রপ্তানিমুখী শিল্প গড়ে তোলা হলে দেশে শিল্প কাঠামোর প্রসার ঘটবে এবং দেশে অধিক সংখ্যক শিল্প - কারখানা প্রতিষ্ঠিত হবে এর ফলে দেশের দ্রুত শিল্পায়ন সম্ভব হবে।
২) দেশের কাঁচামালের সদ্ব্যবহার:- রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠাতা করা হলে দেশ হচ্ছে কাঁচামালের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হবে। দেশের অভ্যন্তরে প্রাপ্ত কাঁচামালের সাহায্যেই প্রধানত রপ্তানিমুখী শিল্প গড়ে তোলা হয়। এর ফলে দেশে কাঁচামালের সদ্ব্যবহার সম্ভব হয়।
৩) কর্মসংস্থান বৃদ্ধি:- দেশের অধিক সংকট রপ্তানি মুখী শিল্প গড়ে তোলা হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায় এর ফলে দেশে বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়।
৪) রপ্তানি বৃদ্ধি:- বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের অন্যতম সমস্যা হল মুষ্টিমেয় পণ্য রপ্তানি। দেশে রপ্তানি মুখে শিল্প গড়ে তোলা হলে রপ্তানি বাণিজ্য বৈচিত্র্য আসে এবং রপ্তানি বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে।
Read More :- বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিধারা।
৫) বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরণ:- বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা হলো ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি ও লেনদেনের ভারসাম্য প্রতিকূলতা বৃদ্ধি। দেশে অধিক সংখ্যক রপ্তানি মুখী শিল্প গড়ে তোলা হলে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পাবে। এবং লেনদেনের ভারসাম্য প্রতিকূলতা দূর হবে।
৬) অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন:- দেশে রপ্তানি মুখী শিল্প গড়ে তোলা হলে রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হয়।
৭) উন্নয়নের অর্থসংস্থান:- বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠাতা মাধ্যমে দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হয়। এভাবে রপ্তানি মুখে শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে উন্নয়নের অর্থসংস্থান করা সম্ভব হয়।
৮) বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা হ্রাস:- বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের অন্যতম সমস্যা হলো বৈদেশিক সাহায্যের উপর অত্যাধিক নির্ভরশীলতা। এ থেকে উত্তরণের উপায় হলো রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করা সম্ভব।
৯) সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার:- রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠা করা হলে দেশের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। এর ফলে দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায় এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
১০) জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ:- রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠিত হলে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসার ঘটে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। রপ্তানি মুখী শিল্প প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতি ভিত্তি মজবুত ও শক্তিশালী হয়। এ সকল কারণে বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে রপ্তানি মুখী শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম।
Read More :- Public - Private Partnership কী এবং এর বৈশিষ্ট্য।
উপসংহারে বলা যায় যে, একটি দেশের জন্য রপ্তানিমুখী পণ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই পণ্যগুলো বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে আমরা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি। এর ফলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয় এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায় এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। আমাদের বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভরশীল কম হতে হয়। এর ফলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয় তাই রপ্তানি পণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। যে দেশ যত বেশি রপ্তানি করতে পারে তাদের অর্থনীতি ঠিক ততটাই শক্তিশালী। সুতরাং সরকারকে নতুন নতুন রপ্তানিজাত পণ্যের হার বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এর ফলে আমরা বিদেশে আরো বেশি রপ্তানি করতে পারবো এবং অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবো। যেটি আমাদের দেশের অর্থনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই কথাটি মনে রাখতে হবে যে অর্থনীতিই দেশের মেরুদন্ড।
বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে রপ্তানিমুখী শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ একটি পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায় এবং এটির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়। দেশের রিজার্ভে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থাকলে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ব্যয় করা যায় এবং এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো শক্তিশালী হয় ও দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায় এবং এর সুবিধা দেশের প্রত্যেকটি জনগণ পেয়ে থাকে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী খাত হলো পোশাক খাত। এটি মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে তবে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য এই খাতটির উপর অত্যাধিক নির্ভরশীল যেটি একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলকর নয়। বাংলাদেশে আরো বিভিন্ন রপ্তানিমুখী খাত রয়েছে কিন্তু সেগুলো তৈরি করা বা উৎপাদন করার অবগঠন খুব একটা উন্নত নয় যার কারণে সেখান থেকে দ্রব্যপণ্য খুব বেশি উৎপাদিত হতে পারেনা যার ফলে দেশের চাহিদা মেটাতেই সব দ্রব্যপণ্য শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বিদেশে সেটির প্রচুর চাহিদা এবং ব্যাপক মুনাফা থাকলেও রপ্তানি করা কষ্টকর হয়ে পড়ে যার ফলে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলকর নয়। সুতরাং সরকারকে অবশ্যই এমন খাত গুলোর উপর লক্ষ্য রাখতে হবে যেটি বিদেশে রপ্তানি করে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। একটি দেশের অর্থনীতির জন্য রপ্তানি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যে দেশ যত রপ্তানি নির্ভর সেই দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো ততই উন্নত সুতরাং আমাদের দেশটাকেও এমন রপ্তানি নির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
0 Comments