যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকে। যেমন - বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, বিনিয়োগ ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকে। এগুলোকে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক ঋণ বলা হয়। ব্যাংক ঋণের বিভিন্ন উৎস গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১) বাণিজ্যিক ব্যাংক :- ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানিক উৎস হল বাণিজ্যিক ব্যাংক। আমাদের দেশে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসার প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বল্পমেয়াদী ও মধ্যমেয়াদী ঋণ প্রদান করে থাকে। তবে সাম্প্রতিককালে বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পদের জমানাতে বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহ যেমন - সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক এবং বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক যেমন - ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক প্রকৃতি ব্যাংক সমূহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২) বিনিয়োগ ব্যাংক :- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাহিক্য উৎস হল বিনিয়োগ ব্যাংক। এ ধরনের ব্যাংক সাধারণত শেয়ার অবলক্ষণের মাধ্যমে যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিনিয়োগ ব্যাংক সাধারণত কোম্পানিসমূহের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং এই মর্মে নিশ্চয়তা দেয় যে, অবিকৃত শেয়ারসমূহ তারা ক্রয় করে নেবে। এভাবে বিনিয়োগ ব্যাংক কোম্পানির অর্থায়নে সাহায্য করে। বাংলাদেশে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ এই ধরনের বিনিয়োগ ব্যাংকের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
৩) বীমা কোম্পানি :- বীমা কোম্পানি হলো দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস, বীমা কোম্পানি বীমা কারীদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম বাবদ নিয়মিত অর্থ আদায় করে। বীমার প্রিমিয়াম বাবদ সংগৃহীত অর্থ থেকে বীমা কোম্পানি সমূহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ প্রদান করে থাকে। তবে বীমা কোম্পানি কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। তাছাড়া, বীমা কোম্পানি মূলত বৃহত্তম প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দিয়ে থাকে। সাধারণ মানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বীমা কোম্পানি থেকে খুবই কম ঋণ পেয়ে থাকে।
Read More :- ভেনেজুয়েলায় মুদ্রাস্ফীতির ভয়ংকর প্রভাব।
৪) বিশেষায়িত ব্যাংক :- দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের অন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক উৎস হল বিশেষায়িত ব্যাংক। এধরনের বিশেষায়িত ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য হলো যে, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করে থাকে। এসব বিশেষায়িত ব্যাংক বা উন্নয়ন ব্যাংক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন করে থাকে।
৫) ইজারা কোম্পানি :- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল ইজারা কোম্পানি। বাংলাদেশে বেশ কিছু লিজিং কোম্পানি রয়েছে যেমন - ফার্স্ট লিজিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, বে-লিজিং এন্ড ইনভেসমেন্ট লিমিটেড, ফিনিক্স লিজিং কোম্পানি লিমিটেড, প্রিমিয়ার লিজিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ইত্যাদি। এসব লেজিং কোম্পানি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় স্থায়ী সম্পত্তি ইজারা প্রদানের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান করে থাকে।
এই সকল ব্যাংক ছাড়া বিভিন্ন এনজিও গুলোও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষকে ঋণ প্রদান করে থাকে। নিম্নে এমন কিছু এনজিও সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ব্রাক :- ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা হল ব্রাক। এই সংস্থাটি সামাজিকভাবে বঞ্চিত ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর স্বল্প অর্থের চাহিদা পূরণের জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে। অর্থায়নের এই উচ্চ থেকে অতি দরিদ্র চরবাসী, অসহায় নারী, অবসরপ্রাপ্ত ও ছাঁটাইকৃত সরকারি কর্মচারী, শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইত্যাদি ক্ষুদ্র ঋণ পেয়ে থাকে ডিসেম্বর 2017 পর্যন্ত ব্র্যাক মোট ১,৬৯,৭১৯ কোটি টাকার ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করেছে।
প্রশিকা :- ১৯৭৫ সালে মানিকগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে প্রতিকার কার্যক্রম সূচিত হয়েছিল। প্রশিকা বাংলাদেশী সবচেয়ে বড় এনজিওগুলোর অন্যতম। সংস্থাটি ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশের অসংখ্য গ্রাম ও বস্তিতে বসবাসকারী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
Read More :- অর্থায়ন এবং এর সুবিধা গুলো কি কি?
আশা :- ১৯৭৮ সালে আশা প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৯২ সালে বিশেষায়িত ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। আসার স্বল্প ব্যয় ও ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত আশা ক্রমপুঞ্জিভূতভাবে ১,৫৭,৬৮২.৫৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।
করিতাস :- দেশের পিছিয়ে পড়া দারিদ্র মানুষের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের উন্নয়ন শিক্ষার পাশাপাশি দরিদ্র বিমোচনে করিতাস নানা কর্মসূচির বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমানে দেশের ২৬ টি জেলার ৬২ টি উপজেলায় তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত ২,৫৮,৯৩৭ জন উপকার ভোগীর নামে করিতাস মোট ৩,২৫১,৭৪ কোটি টাকা ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করেছে।
গ্রামীণ দারিদ্র মোচনের লক্ষ্যে গ্রামের বিত্তহীন জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি আওতায় বিভিন্ন আয় বর্ধনমূলক প্রকল্পে ঋণ প্রদান করা ছাড়াও গ্রামীন দরিদ্রদের জন্য কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা প্রভৃতি সামাজিক সেবা খাত সমূহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সংক্ষেপে বলা যায়, বাংলাদেশের এনজিও গুলো প্রথম দিকে কেবল ত্রাণ - তৎপরতা পরিচালনা করলেও ৮০ এর দশকের শুরু থেকে বিভিন্ন খাতে সেবা দেওয়া শুরু করে বিশেষ করে গ্রামের দরিদ্র ও বিভিন্ন অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করার মাধ্যমে তাদের আত্ম সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং গ্রামের দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
0 Comments