অর্থনীতি একটি দেশের মেরুদন্ড সুতরাং একটি দেশের উন্নয়নের জন্য অর্থনীতিবিদের অবদান অপরিসীম। অর্থনীতিবিদরা একটি দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকেন এবং কিভাবে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখেন। ইতিহাসে অনেক অর্থনীতিবিদ আছেন যারা বর্তমান বিশ্বের এই অর্থনৈতিক কাঠামোকে গড়তে সাহায্য করেছেন। তাদের মধ্যে বিশিষ্ট কিছু অর্থনীতিবিদ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল।
১. অ্যাডাম স্মিথ
আধুনিক অর্থশাস্ত্রের জনক হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৬ই জুন ১৭২৩ সালে যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করে এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তিনি পড়াশোনা করেন। ১৭৭৬ সালে 'An enquiry into the nature and causes of the wealth of nations' নামক গ্রন্থ লিখে অর্থনীতির মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা দেন। অ্যাডাম স্মিথ স্কটল্যান্ডের ফিফের ক্রিকক্যান্ডি শহরে একজন রাজস্ব নিয়ন্ত্রকের পুত্র ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য বইসমূহ হলো:- The Theory Of Moral Sentiments, The Welfare Of Nations Etc.
২. আলফ্রেড মার্শাল
আলফ্রেড মার্শাল ২৬ শে জুলাই ১৮৪২ সালে ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি উনিবিংশ শতাব্দীর প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ। তার বই ১৮৯০ সালে প্রকাশিত 'Principle of economics' বহু বছর ধরে ইংল্যান্ডের অর্থনীতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি চাহিদা ও যোগান, প্রান্তিক উপযোগ এবং উৎপাদন ব্যয়ের হিসাব শাস্ত্রের ধারণার জন্ম দিয়েছেন। তাকে আধুনিক অর্থশাস্ত্রের অন্যতম জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার উল্লেখযোগ্য বইসমূহ হলো:- Principle Of Economics, Money, Credit And Commerce, The Economics Of Industry, The Percent Position Of Economics Etc.
তিনি ২ ফেব্রুয়ারি ১৮৫১ সালে অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্য, জার্মানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অস্ট্রিয়ান স্কুল, হেইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় ও জেনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন। তিনি অস্ট্রিয়ান স্কুল অব ইকোনমিক্স এর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি ১৮৯৫ সাল থেকে ১৯০৪ সালের মধ্যে অস্ট্রিয়ার অর্থমন্ত্রী হিসেবে আন্তঃ চক্রভাবে সেবা করেছিলেন। তিনি মার্কসবাদ এর ব্যাপক সমালোচনার একটি সিরিজ রচনা করেছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য বই সমূহ হলো:- Capital And Interest, Control Of Economic Law, Basic Principle Of Economic Value Etc.
তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (পি এইচ ডি) ও (বিএ) করেন। তিনি একজন আমেরিকান অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদ, উদ্ভাবক এবং প্রগতিশীল সামাজিক প্রচারক ছিলেন। তিনি প্রথম আমেরিকান নিউ ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদদের মধ্যে একজন ছিলেন। আর্থিক গণিত এবং অর্থনীতিতে ফিশার সমীকরণ মুদ্রাস্থিতির অধীনে নামমাত্র এবং প্রকৃত সুদের হারের মধ্যে সম্পর্কের অনুমান করে। ফিশারের নামকরণ করা হয়েছে, যিনি আগ্রহের তত্ত্ব নিয়ে তার কাজের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ফাইন্যান্স, ফিশার সমীকরণ প্রধানত বন্ড বা বিনিয়োগের আইটিআর গণনার YTM গণনাগুলোতে ব্যবহৃত হয়। অর্থনীতিতে এই সমীকরণ নামমাত্র এবং প্রকৃত দুধের হার আচরণের পূর্বাভাসের জন্য ব্যবহৃত হয়। তার উল্লেখযোগ্য বই সমূহ হলো:- The Theory Of Interest As Determined By Impatience To Spend Income And Opportunity To Invest It, Booms And Depression Some First Principles Etc.
Read More :- জেনে নিন বিশ্ব অর্থনীতির কিছু প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ সম্পর্কে।
৫. আর্থার সিসিল পিশু
তিনি ১৮ নভেম্বর ১৮৭৭ সালে রাইড, আইল অব উইট , ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন ইংরেজ অর্থনীতিবিদ। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ইকোনমিকসের শিক্ষক ও নির্মাতা হিসেবে তিনি সারা বিশ্বে অর্থনীতির চেয়ারম্যান হিসেবে গ্রহণ করার জন্য ক্যামব্রিজ অর্থনীতিবিদদের প্রশিক্ষিত ও প্রভাবিত করেছিলেন। তার কাজ অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষত কল্যাণ অর্থনীতিতে আচ্ছাদিত কিন্তু ব্যবসায়িক চক্র তত্ত্ব, বেকারত্ব, পাবলিক ফাইন্যান্স, সূচক সংখ্যা এবং জাতীয় আউটপুট পরিমাপ অন্তর্ভুক্ত। তার খ্যাতি প্রভাবশালী অর্থনৈতিক লেখকদের দ্বারা বিপরীতভাবে প্রভাবিত হয়েছিল, যারা নিজের কাজকে তাদের নিজস্ব বিরোধী মতামত সঞ্চয়িত করার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত করেছিলেন। তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে কয়েকটি পাবলিক কমিটিতে কর্মরত ছিলেন, যার মধ্যে কুনলিফ কমিটি এবং রয়েল কমিশন আয়কর। তার উল্লেখযোগ্য বইসমূহ হলো:- The Economics Of Welfare, Wealth And Welfare, The Theory Of Unemplament.
তিনি ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ৫ জুন ১৮৮৩ সালে কেমব্রিজ, যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন। যার মতামত মৌলিক অর্থনীতির তত্ত্ব এবং অনুশীলনের ও সরকার সমূহের অর্থনৈতিক নীতিগুলো পরিবর্তন করে। তিনি ব্যবসায় চক্রের কারণগুলোর উপর নির্মিত এবং পুরোপুরি সুশৃঙ্খল কাজ করেন এবং ২০ তম শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ এবং আধুনিক ম্যাক্রো ইকোনমিক তত্ত্বের প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য বইসমূহ হলো:- The General Theory Of Employment Interest And Money, The Economic Consequences Of The Peace.
উপসংহার
উপরে বিশিষ্ট কিছু অর্থনীতিবিদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যারা পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তবে তারা ছাড়াও আরও বহু অর্থনীতিবিদ আছেন যারা যাদের অর্থনৈতিক সংজ্ঞার জন্য খুবই জনপ্রিয়। পৃথিবীর আগ্রগতিতে অর্থনীতিবিদদের অবদান অপরিসীম। অর্থনীতি একটি দেশের মেরুদন্ড যেটির সাথে দেশের সমগ্র সেক্টর গুলো জড়িত সুতরাং অর্থনীতিকে'সঠিক'ভাবে পরিচালনা না করতে পারলে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের উপর সেটার প্রভাব পড়বে। একটি দেশের অর্থনীতির কাঠামো যত মজবুত হয় সেই দেশের জীবন যাত্রার মানও তত উন্নত হতে থাকে এবং মুদ্রাস্ফীতি ও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। আর এই অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করার জন্য অর্থনীতিবিদদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাদের দেওয়া সংজ্ঞাগুলো অনুসরণ করে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করা হয়। বর্তমান বিশ্বের সকল দেশ একে ওপরের প্রতি'বহু নির্ভরশীল সুতরাং এই ক্ষেত্রে অর্থনীতির গুরুত্ব বহু অংশে বেড়ে যায়। অবশেষে এটাই বলা যাই যে একটি দেশের মজবুত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অর্থনীতিবিদরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
0 Comments